আজ ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ আমার মনে গভীর উত্তেজনা। আজ শহীদের স্মরণে ফুল দিতে যাব শহীদ মিনারে। বাগান থেকে খুব যত্ন করে ফুল তুললাম। আজ এই দিনে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয়ে ছিল। ভাষার জন্য জীবন দিয়ে ছিলাম আমরা বাঙালিরা । তবে বর্তমানে অনেক বেশী আন্দোলন করা হয় তবে সেই আন্দোলনের উদ্দেশ্য দেশ, ভাষা কিংবা জাতির সম্মান রক্ষার জন্য নয়। রাস্তা ঘাট বন্ধ করে গাড়ি ভাঙ্গার জন্য। আমি কি করতে পারি আমি যে ছোট।
তোড়া বাঁধার কাজ বাকী আছে। তোড়া বাঁধা শুরু করলাম। এমন সময় রিয়া আপা এসে ঢুকলো আমার ঘরে।
আমাকে আদেশের সুর বললো, কি করছিস ?
আমি বলাম, তোড়া বাঁধছি।
আপা বললো, আমাকে একটা গোলাপ দেতো।
আমি তো মহা খুশি। আমার বোনের ভালো উন্নতি হয়েছে। আমি মনে করেছিলাম, শহীদ মিনারে দেবে।
আপা বললো, গোলাপি নয় লালটা দে। লাল গোলাপ আবিরের বেশী পছন্দ।
আমার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো। এই আবির হচ্ছে আপার কলেজের ক্লাসমেট। মেট্রিকে কোন রকমে পাস করেছে। পড়া শোনা কিছু করেনা শুধু কবিতা লেখে। সেগুলো আবার প্রেরোডি টাইপ।
যেমন:
বল বীর-
বল উন্নতো মম শীর
সে এটাকে বানিয়েছে:-
আমি ব্যাঙ-
আমি যখন তখন মারি ল্যাঙ।
মেয়েদের কাছে বলে কিনা যানি না, তবে সে ছেলে দের কাছে অনেক উল্টা পালটা কবিতা লেখে
যেমন,
যেখানে দেখিবে বিলডিং,
সেখানে মারিবে ফিলডিং।
আর ঐ গাধার জন্য আমি কিনা দেব আমার বাগানের গোলাপ।
আমি আপাকে যথা সম্ভব ঠান্ডা গলায় বললাম, আমি তোকে ফুল দেব না।
আপা এবার বললো প্রথমে দিতে চেয়েছিলি কেন ?
আমি বললাম, আমি ভেবেছিলাম শহীদ মিনারে ফুল দিবি।
আপা এবার বললো, আবির বলেছে এসব কাজ নাজায়েজ। ওর মা খুব ধার্মিক কিনা!
আমি বললাম, আচ্ছা প্রেম করা বুঝি জায়েজ ।
আপা বললো, দেখ বেশী জ্ঞান দিবি না তাড়াতাড়ি ফুল দে।
আমি বললাম, আমি কোন গাধার জন্য আমার বাগানের ফুল দেবনা।
এবার আপা রাগে গজ গজ করতে করতে আমাকে চড় লাগিয়ে দিয়ে বললো, বেয়াদপ তোর রেজাল্ট শুধু ভালো হলে হবে কি, তুই আদব-কায়দা কিছুই শিখতে পারলিনা। বড়দের নামে এমন কথা বলিস।
বারান্দা থেকে বাবা আমাকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বললেন, তুই সকাল বেলা আমার মেয়ের পিছে লেগেছিস। তোকে আমি আচ্ছা করে মার লাগাব।
বাবার এই মহৎ গুন তার মেয়ে যত দোষ করুক না কেন "তার সাত খুন মাফ"।
আপা আমার ঘর থেকেই কাঁদো কাঁদো সুরে বললো, দেখ তো বাবা ওর বাগান থেকে একটা ফুল নিতে চাচ্ছি দিচ্ছে না। আবার বাজে বাজে কথা বলছে।
বাবা বললো, তুই আয় মা বাগান করার খরচ আমি দেই তুই তোর ইচ্ছে মত ফুল নিয়ে যা।
রিয়া আপা আমার বিদেশী গোলাপ ফুলের গাছটা থেকে গোলাপটা নিয়ে নিলো। একটাই মাত্র ফুল ছিল। আমার মনে হল আমার বুকের ভেতরের হৃদপিন্ড যেন নিয়ে গেল। তবে আমি কি করতে পারি আমি যে ছোট।
স্কুলে যাচ্ছি একটা বাচ্চা ছেলের হাতে দেখতে পেলাম ফুলের তোড়া । আমি ছেলেটাকে চিনি না। তবুও জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছ ?
ছেলেটা বললো, ফুল দিতে যাচ্ছি
আমি বললাম, কোথায় ফুল দিতে যাচ্ছ ?
ছেলেটা বললো, শহীদ মিনারে।
আমি বললাম, বলো তো আমারা শহীদ মিনারে কেন ফুল দেই ?
ছেলেটা বললো, জানি না ।
আমার খুব দুঃখ লাগলো। আমাদের মধ্যে ফুল দেবার সংস্কৃতি শুধু গড়ে উঠছে এর আসল ইতিহাস আমরা জানি না ( আমি এখানে "আমরা" বলতে শিশু কিশোর দের বুঝিয়েছি )।
আমরা র্যালি করে শহীদ মিনারে পৌছলাম। এখানে এসে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেল। কারন এখানে দেখলাম শহীদ মিনারে ফুল দেবার ব্যাপারে কারও বেশী আগ্রহ নেই। বেশীর ভাগই এসেছে ফাজলামো করার জন্য। কেউ কেউ তো আবার তাদের প্রেমের প্রপোজ কার্জ এই দিনেই শেষ করছে। কারও চিন্তা নেই এই দিনের ইতিহাস নিয়ে। সবাই দিনটাকে যে যার মত ব্যাবহার করছে।
আমি কি করতে পারি আমি যে ছোট।
[ বিদ্র:- এই পোষ্টটা সামহোয়ারইন ব্লগেও দিয়েছি। লেখাটা আমি লিখেছিলাম ২১শে ফ্রেব্রুয়ারির সময়। একটু বাসি নেভার মাইন্ড ]
2 টি মন্তব্য:
তোমার অনেক কিছুই করার আছে । যা আমাদের অনেকের করার মতো সময় বা ইচ্ছা নাই।
ধন্যবাদ...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন